পেঁপে আবিষ্কার ও লংকা-কাণ্ড ।
শিরোনাম এটাই হওয়া উচিত ফরিদুল হাসানের কথা বলতে চাইলে ।
গ্রীষ্মের ছুটি পড়ে গেল । মাইনর স্কুলের ছুটি মানেই একমাসের কমে থামার নামধান্দা থাকেনা । বাচ্চা পোলাপান কম ছুটিতে পড়বে কেমন করে আর দুটো আম-লিচু খাওয়া , পাড়ায় পাড়ায় দৌরাত্ম্য করে না বেড়ালে স্কুলের ক্লাস কাটিয়ে সেসব করবে যে ! তাই ঢের ছুটি অবাস্তব হতেই পারেনা , বরং বুদ্ধিমানের মস্তিষ্কপ্রসূত একটি উত্তম বন্দোবস্ত এটি। মোদ্দায় এই হল জাস্টিফিকেশন আমাদের কাছে । জ্যৈষ্ঠমাসের গরম যত বাড়বে , লিচুর ঝাড়ে ততবেশি রঙের খেলা , সবুজ লিচুর গায়ে খানিক রঙ দেখা দেবে প্রথমে , তারপর পাকতে পাকতে লিচু যত লজ্জা পাবে তত রঙ গাঢ় হবে , টইটুম্বুর লিচু রসালো অন্তরভাগ নিয়ে গরম সইবে ; দোল খাবে বিকেলের ঠাণ্ডা হাওয়ায়। ঠাকুরদাদা বয়স্ক ব্যাক্তি , সবুর করার ধাত একটু বেশিই ; ফলত দিনের বেলা লিচু পাহারা ও রাত্তিরে পুরান মশারি ঢেকে , পাড়া-পড়শির গভীর রাতের ঘুম ভণ্ড করে টিন বাজিয়ে বকদুল , রাতচোরা ইত্যাদি লিচুর ধান্দায় ঢুঁ-মারা পক্ষীকূল ভাগিয়ে তার ওই টইটুম্বুর অন্তিমভাগের পরিণত লিচু চাই-ই চাই । দিনটা শুক্কুরবার ; সকালের জলখাবারের পর থেকে বহু চেষ্টায় মৃদুপক্ক লিচুলাভের সকল প্রচেষ্টা বিফলে গেল ; ষষ্ঠীদাদা , তিকেন আর পম্পিদিদির সাথে গম্ভীর ‘গোলটেবিল বৈঠকে’ ঠিক হল ঠাকুরদাদার গোসলের সময়টা টার্গেট করা বিচক্ষণের কাজ বটে ! দক্ষিণঘরের বেরার ফুটোতে ওৎ পেতে বসে আছি তার গোসল-যাত্রার অপেক্ষায় , এমন সময় গোটা বাড়ি শোরগোল ফেলে কে যেন হাউমাউ করে কেঁদে উঠল, কিছু বোঝার আগে চেয়ে দেখি একজন ঠাকুরদাদার গলা ধরে কাঁদছে, খানিক বাদে তারও কান্না শুরু । ঠাকুরদাদাকে আমরা কেউ কাঁদতে দেখিনি , সাথের লোকটিও অচেনা । সম্বিৎ ফেরার আগেই লক্ষ্য করলাম সাথে আরেকটি মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি ও আমাদের বয়সী ছেলে । প্রায় আধঘণ্টা সময়পর ক্রন্দন-পর্ব সমাধা হলে দেখা গেল বাড়ি ভেঙ্গে সব লোক জড় হয়েছে । চোখের জল মুছে ঠাকুরদাদা বীরদর্পে আয়োজনের ফরমায়েশ নিয়ে ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে উঠল ; প্রকাশ মাছ ধরতে গেল , বাড়ির গৃহিণীরা ভালমন্দ রান্নার বন্দবস্তে ব্যাস্ত হল। খানিক বাদে বোঝা গেল কানাঘুষোতে , সেই লোকটি হাসানচাচা ! জন্মের পর থেকে আমাদের একান্নবর্তী কালেক্টিভে প্রত্যেক সন্ধ্যেয় একছিল সুর করে পড়া ধারাপাত আর এই হাসানচাচার গল্প , যতক্ষণ না আটটার ট্রেন দশক্রোশ দূরে কাশিয়াবারিতে হুইসেল বাজায় ! সাতচল্লিশের আগে আমাদের বাড়িটাই ছিল হাসানচাচার বাড়ি । দেশছাড়ার সময় আমাদের নীলফামারীর ঘরের মালিক হল এই হাসানচা । তার মামাবাড়ির দ্যাশ হল ওই মেখরটারি ; কমবয়সে ঠাকুরদার সাথে তার বাইচের দলে মোলাকাত , সেই থেকে দোস্তি ! সেই হাসানচাচার ছেলে হল ফরিদুল হাসান । জমির মোকদ্দমায় ভিটেমাটি যাওয়ার জোগাড় , হাসানচা’র এইমুলুকে আগমন মামলার ক্যাপিটালের ধান্দায় । ছোট হাসানের সাথে দোস্তি সেই বিকেলেই ; তার ডাংগুলি খেলার নিপুণতায় হুব্বা সবাই , এক দানে বিশফুট দূরে নড়ি ছুড়তে পারে আর লাট্টু ফেঁকার কায়দা তো লা-জাবাব ! পরদিন দুপুরে খামিরের দিঘিতে সে ডুবসাঁতরে দুই মাথা জলে শোল ধরল ; সেই থেকে ফরিদুলের যাবতীয় কর্মকাণ্ডে ওস্তাদি কবুল করল মহল্লায় বাচ্চা-কাচ্চা। হাসানচাচার অর্থসন্ধান কর্মকাণ্ড বেশ দীর্ঘ হতে লাগল , সাথে ফরিদুলের সাথে দোস্তিও । বড় হাসান আমাদের সম্পর্কে চাচা নাহলেও , বাপ-জেঠার গল্প শুনে আমরাও কেমন হাসানচা বলা আরম্ভ করেছি । ফরিদুল তার তৃতীয় সংসারের পোলা । বাকি দুইটি মা তার গত হয়েছে ঢের আগে । একদিন সকালে ছোট হাসান ঠাকুরদাদাকে ধরলে বাশবাগানের ওই লাউমত ফলের ঠিকানায় । ও ফল যে বাংলাদেশের নয় সে নিয়ে নিশ্চিত ; গোটা রংপুর , নীলফামারী , ডোমারে এই ফল তো কেউ দেখে নাই ! জানা গেল ও ফল ফিরিঙ্গীর দান । হলদিবাড়ির যে র্যা লে সাহেবের রেলগুমটী পাটের গুদামের , সেইখানে হরদম এই পেঁপেগাছের জঙ্গল । সাহেবসুবো গর্মির দিনে তার পাকা ফলে নুন মাখিয়ে ফলার করে , অধুনা যা মেলার মাঠ সেইখানে , এলাকার সবকটা তামাকের কোম্পানি , পাটের কোম্পানির ফিরিঙ্গী এক হয়ে আড্ডা দেয় সেই ফল খেতে খেতে ; গুলঞ্চের ছায়ায় সফেদ কাপড়ে ঢাকা টেবিলে সাজিয়ে রাখে , গল্প করে । সে যে বিষফল নয় , তার প্রমানে শুরু হল পেঁপে দিয়ে অতিথিসেবা ওই মধ্যাহ্নেই ঠাকুরদাদার তলবে ! দুপুরে পেঁপে সর্ষে , পেঁপে পাঠা , পেঁপে টক; রাত্তিরে পেঁপের ডাল , কাঁঠালের বীজের সাথে পেঁপে ঘণ্ট , পেঁপে পুঁটি প্রভৃতি ! স্বাভাবিকভাবেই পরদিন তাদের শুরু হল পেটগর্মি ! দুই হাসানের আর একটুও সন্দেহ রইলনা যে সেই ফল বিষফল অতি অবশ্যই ! ইতিমধ্যে হাসানচাচা কিছু অর্থসন্ধানে সমর্থ হলেন ; তার ঘর ফেরার দিন এলো কিন্তু হাসান ফেরা হলনা । দেশে বিবাদের শেষ নাই , আত্মিয়-কুটুম্ব , ভাই-ভাইজানে লড়াই বড় । ফরিদুল রইল নুরুলের-টারিতে চাচার কোন ফুপাতো বোনের বাড়ি । মহাল শান্ত হলে ফের ফরিদুল ফিরবে তার মুলুকে । সেই শুরু আমাদের আহ্লাদের দিনরাত্রি । হাসান ভর্তি হল আমাদের মাইনর স্কুলে । ঘুঘুমারির দহলায় সে যায় কম , ঘুরি ওড়াতে । মহল্লায় শিরীষ গাছের সারি ধরে , পুঁই গাছের মাচার পাশ দিয়ে তার ঘুরি ওড়ানোর ধান্দা বেশি । সে বলে অত উঁচুতে উড়িয়ে মজা নেই । যত কম খাঁড়া , গাছগাছালির মাঝে ঘুড়ি ওড়ানোয় বেশি মাথা লাগে , মজাও ! তার মতন জঙ্গল ঝাড়ের মাঝে ঘুড়ি ওড়ানো এপাড়ায় কারো সাধ্যি নেই । বর্ষালী দিনে হাসান এসে ভামবিড়ালের ডাক দেয় মাঝরাতে , পা টিপে টিপে পেছনবাড়ির দোর খুলে ডেকে নিয়ে যায় মাছ ধরতে , হাতে টাঙ্গি আর পুরান রিক্সার টায়ার , কখনও মন্ডলঘাট – সিপাইপাড়া তো কখনও ভোলারহাট আরও দূর । ভোর হওয়ার আগেই ঘরে ফেরা । মাঝরাতে দূর অবধি আকাশ নেমে যাওয়া দহলায় নিজেদের প্রেত মনে হত ! মাঝে মাঝে টায়ারের মশালে পোড়া গন্ধ অসহ্য হয়ে এলে নিভিয়ে দিই ; কালিডাঙ্গায় দূরে কালো মেঘ জমে এলে ভয় করে তখন , লোম খাঁড়া হয় দহলার শিরশিরে বাতাসে , বাড়ি ফেরার ইচ্ছে হয় খুব । হাসানের এত কিছুর টাইম নাই , তার মাথায় যেন কীসব ভর করত , মাছধরার ঘোরে পাগল হাসান তখন কথা বলত না ! ওইমতন এক রাত্তিরে কুম্বারির রেলপুল পার হয়ে কোথাও পৌঁছে গেছি , কারো কোন হুশ নেই, রাত দুটো পার হয়েছে হয়ত ! খোলোই পুরো ফাঁকা ; মাছ মিলছেই না আজ , হাসানের মেজাজ গরম । অমাবস্যা কিনা জানা নেই তবে কৃষ্ণপক্ষ চলছে সেটা নিশ্চিত । আরও দহলা পার হই আমরা , কাশিয়াবাড়ির ডাঙ্গা আসে তারপর পাঙ্গার সোঁতা ; দূরে গাঁয়ে কুকুর কেমন সুর করে কাঁদে , পায়ের তলায় ঠাণ্ডা কিছুর ছোঁয়া লাগতেই বুকভেঙ্গে চমকে উঠি ; ভয়ার্ত হাসান চমকে উঠে আশ্বাস দেয় ও ব্যাটা জলঢোঁড়া ছাড়া কিছু নয় , সে গুণগুণ করে গান গাওয়ার চেষ্টা করে । ডাঙ্গায় হোগলার বন মান্দার গাছের ঝোপ পেরোতেই পাঙ্গার নাগাল মেলে । টাঙ্গি নিয়ে খোঁজাখুঁজি চলে আবার , টপাটপ বোয়াল মিলছে , কাছেই কোথাও শ্মশান নিশ্চয়ই , নাহলে বোয়ালের এত দাগি চেহারা কে কবে দেখেছে , হাসান বলে ওঠে । তার কথা শেষ হওয়ার আগেই পেটে গুঁতো দিল হাসান , ইশারায় দূরে তাকাতে বলল , চেয়ে দেখি চার-পাঁচটা আগুনের গোলা প্রায় চার সাড়ে চারশ মিটার দূরে নদীর এপার থেকে ধীরে নদীর ওপারে যায় , মাটির খানিক ওপরে সবকটা গোলা , তখন ভয় নেই , কি ছিল কিছু বোঝার মতন অবকাশ ও নেই , শরীর অবশ লাগে , মাথা ঝিমঝিম করে গলা শুকিয়ে আসে আর নিজের অজান্তে খাঁড়া হওয়া লোম ; পা কাঁপছে । হাসান আবার গুঁতো দেয় , আমার হাত থেকে মশাল নিয়ে এগোতে থাকে কিছু না বলে , আমি অদ্ভুত ইশারায় তার পিছু ছলা শুরু করি , মাছের খোলোই কোথায় ফেলেছি মনে পরেনা । হাসান এগোতেই থাকে আগুনের গোলার দিকে । গায়ে বিদ্যুৎ খেলে যাওয়া ব্যাপারটা কেরম হয় সেই প্রথমবার বোঝা , শিরদাঁড়ায় শীতল কিছু বইছে কেমন । হাসানের পিছু পিছু এগোতে থাকি । কতখন হেঁটেছি মনে নেই ; আমার মুখ দিয়ে একটাই কথা তখন , চল হাসান ঘর যাই , আর মাছ ধরে কাম নাই । হাসান একসময় বিরক্ত হয়ে উত্তর দেয় ; মাছের ধান্দায় আমি নাই , এইরকম ভুতের খবর আমি অনেকদিন শুনছি , আজ না দেইখ্যা শান্তি নাই । মেলা দিনের খোয়াব এইডা ! আমার মুখে তখনও সেই এক কথা , চল হাসান ঘর যাই । আগুনের গোলার আরও কাছে আসতে হঠাৎ আন্দাজ হল কেউ মাথায় হাঁড়িতে আগুন নিয়ে হাঁটছে , আরও খেয়াল করতে বোঝা গেল , লম্বা চূল , রোগা চেহারার মেয়েমানুষ ; হোগলার বনে লুকিয়ে গোলার আলোয় আরেকটা জিনিস দেখে এইবার পালানোর কথা মনে এলো । কারো যে মুখ দেখা যায়না ! মুখগুলো বিকৃত কারো কান নেই কারো চোখ কেউ যেন গুঁতো মেরে নষ্ট করেছে , কারো নাক গলে ঝুলে পরছে মুখের ওপর , গলায় ঘা , মুখে পিঠে ঘা ! সেই দেখে হাসান মারল দৌড় ,আমিও ঝাপ জলে । ওদিকে আগুনের গোলা বাহকদল তেড়ে গালি দেয়া শুরু করেছে । পাঙ্গা পেড়িয়ে দৌড় আরও । এরম কতক্ষণ দৌড়েছি মনে নেই । একটা গ্রাম আসতেই কুকুরগুলো আরও জোরে চেঁচানো শুরু করল । কে যেন হঠাৎ হাত ধরে মাটিতে শুইয়ে মাথায় জল দেয়া শুরু করেছে , কেউ কুপি নিয়ে মুখ দেখে বলছে বুড়ারবাড়ির পোলা না , পিলকের টারির ছেমড়া যে , এত রাতে কি করে !! হাসানের পাত্তা নেই ! ভোরে তারা বাড়ি পৌঁছে দিল । বাড়ির লোক দেখে অবাক । ঘরের ছেলে কুম্বারি কেমনে গেল ! আমাদের মাছ ধরার গল্প আর কেউ জানেনা । বাড়ির মানুষ ভাবলে ভুতে পেয়েছে , নিশি ডেকে নিয়েছে ছেলেকে । তুকতাক মন্ত্র পড়া চলল সকাল অবধি । কেউ মধু ওঝাকে ডাক দিল , হাবাং হোমিওর ডাক্তার সেই এক ওষুধ খাওয়ালো , জ্বরে যা দেয় কিংবা পেটব্যাথায় । জেঠি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে , এযাত্রায় বাঁচন গেল তোর , রাইতে একেলাই থাকার কাম নাই ! হাসান পরদিন দেখা করল ক্লাসের হাফটাইমে । মুখ ব্যাজার করে বলল এইবারও ভুত দেখা হলনা ! কাসিয়াবারির পাঙ্গার ধারে সেই হোগলার বনে নাকি এলাকার কুষ্ঠরোগীর বাস । তারাই অমাবস্যার দিন কিসের যেন উপাসনা করে মাথায় আগুন নিয়ে উলঙ্গ হয়ে নদী পারাপার করে । হাসান মুখ ভার করে সে গল্প শোনাল । তারপর আর অনেকদিন যাওয়া হয়নি মাছধরতে ।
ভাদ্রমাস পড়ে গেল । হাফ-ইয়ারলি পরীক্ষার সময় । হাসান গোটা স্কুল অবাক করে আরেকটি ওস্তাদি করল । কর্মশিক্ষার ভাইভা সেদিন । কেউ কলমদানি , কেউ পাটের দড়ি , কেউবা মাটির আম , আতা বানিয়ে হাজির । মালিপাড়ার ছেলেদের কাজ বেশি মাটির । শুধু হাসানের হাতে কিছু নেই । কেউ জিজ্ঞেস করলে সে মুচকি হাসে । সহপাঠীরা যে যার মত নিজের নিজের ভারসান বানানো শুরু করেছে ; কেউ বলে হাসান এবার ডাহা ফেল , কেউ বলে হাসান তো ওস্তাদ , কিছু একটা ব্যাপার ঘটাবেই । ভাইভার টিচার নরেন্দ্রবাবু ; সারাবছর তার আমাশার ব্যামো , চরম উত্তেজনাহীন কিছু হলে সেটা নরেন স্যার , নজরুলের কবিতা আর সহায়কে দুর্গার মৃত্যু একরকম নিঃস্পৃহতায় পড়ান । সবাই বলে নেতিয়ে নরেন ! সেই নরেনবাবুর সামনে হাসান ইতিহাস বইয়ে বুকচিতিয়ে লর্ড কার্জনের ছবির মতন দাঁড়িয়ে পকেট থেকে দুটি গোল বস্তু টেবিলের ওপর রাখল । কেউ কিছু বোঝার আগেই দারিমি চিৎকার করে বলল ‘এ যে পেটো !’ । নেতিয়ে নরেন তার জীবনের যাবতীয় জমিয়ে রাখা উত্তেজনা দিয়ে আমাশার কথা ভুলে হাসানকে তাড়া করল । হাসান একছুটে চোখ বড় বড় করে পাঁচিল টপকে সেই যে গেল তো গেলই !
(চলবে)
অভাবনীয়
উত্তরমুছুন