শনিবার, ২৫ জুন, ২০১৬

হাকিমতপুরার রেলগাড়ি


হাকিমতপুরার রেলগাড়ি , সপ্তগ্রাম কাদা-জংলার দেশ পার হয় ; ভাটিপহরে তলহীকুঁড়ার বড় বটগাছের মাথায় যেইসব মা-বকের দল সবে ডানা হওয়া বাচ্চার দেখনদারি করে তাদের সবকটার পিলা চমকানো শব্দ করে হুশহুশ করে পিরীচপুর এস্টেটের সীমানায় মিলায় গেলে  ঈবলিশ মিঞা প্রলাপ বকে , শয়তানের যন্তরটারে গালি দেয়। রোগা সিকান্দার , ওই যে হাড়গিলার মতন গলা , সারাদিন ঘাস কাটে শুয়োরের একঘেয়ে মাথা নামিয়ে , তার  নাগাল পেলে ঈবলিশ  যে ধানগাছের গোড়ার কথা জানে , উজানগাঙের ঝিলিকমারা মৌরলার ডিমের  কথা জানে অথবা ভামসাগরের জলে কারা এসে আন্ধারের ক্ষণে সান করে যায় , শাপলার প্যাটে রবিমরশুমের ফসলের আগাম হিসাব কষে দেয়  সেইসব গুপ্তকথা গলা নামায়ে বলে।  যন্তরটা যে সাতগাঁয়ের এইমতন হাজারটা গুপ্তগল্প শহরে পাচার করল , আর সেকথা রাতিচোরা ফেউ বাদে কেউ জানলোনা সেইটা যে কত্তোবড়ো ঘোর আকালের নিশান সিকান্দারের পো সিকান্দার'রে বোঝায় আর মুরুব্বির মতন মাথা নাড়ে   !

উটপোকা


.
এই হলো উটপোকা। এরে উটপোকা নাম কে দিলো সেইটা বলা মুশকিল। উটের সাথে আজন্ম কোনো লেনাদেনা তো দেখি নাই ! উটের গায়ের রং এই কীটের ধারেকাছেও না ! মাইনষের পোলাপানের বড় সাধ উটপোকা পোষার ; আসলে তারে পোষ্য কওয়া যায় না ; ধরেন  'উড়ানফন্দি' নাম দিলাম সেই কায়দাটার। উটপোকার মায়ে মাটির বাসা বানায় আর তার ভিতর ডিম দিয়া কই যায় কে জানে। সেই ডিম জোয়ান হইলে ডানা লইয়া মাটির গুটি ফাটায় ফরর-ফরর করে উড়ে । আর উড়ানফন্দির পোলাপান একদিন-দুইদিন-তিনদিন সবুর কইরতেই থাকে উটপোকার বাচ্চা কবে বাইর হবে এই ধান্দায় ।  বাচ্চা ধরা তো মুখের কথা নয় ! বাচ্চা ধরে , তার কোমর আর মাথায় রেশমি সুতা লাগায়, দুই একটা হুদাই ফাঁকা ডেমো শেখায় - সে প্রচুর হ্যাপা। আসল মজা তো তার পরে যখন সেই বান্ধা উটপোকারে  কওয়া হবে  'উইড়্যা যা ,যাহ বাচ্চা , উইড়্যা যা !' , বোঝো ঠ্যালা !!  মরন !
যাই হোক , আসি নাম-এ  , এইরাম নামের কৌশল কিন্তু ভালোই বাড়সে পুরানপল্লীর ঘরে ঘরে।  মিড-ডে মিল-এর ধান্দায় যেকটা বাচ্চা নুরুলের টারির প্রাইমারি স্কুল যায় , তার মধ্যে যে দুইটার প্যাটের ব্যামো , প্রায় ক্লাস পলায় পেছনের বাঁশঝাড়ে মুখোমুখি বসে হাগে , সহজ পাঠের ক্লাস থেকে হরপ্পার ধ্বংসাবশেষ পড়ানো টানা দুই ক্লাস যাদের হাগতেই কেটে যায় বাঁশঝাড়ে , সেই দুইটার নাম হল ডালটন আর পাভেল ! হাঁ আলবৎ বাঙালির বাচ্চা ! আপনারা যে কয়টা পাভেল আর একটা ডালটনের নাম জানেন , তাগো ফুপাতো , চাচাতো , খালাতো কিচ্ছু লাগেনা এরা ! ঠিক উটপোকার নামের মতন কেইস !
সেইদিন 'উড়ানফন্দি'র উস্তাদমতন একটা মাইনসের শাবক , নামটা ঠিক মনে নাই , কারে যেন কইলো সেই গল্পটা । আসলে যে কয়দিন পোলাপান  বাগড়া দিয়া উটপোকার গুটির পাশে  বইয়া থাকে , সেই কয়দিনেই উটপোকা গুটি ফাটাবেই ফাটাবে ! কারণটা গুপ্ত  অথচ অনেকেই জানে , তাই খোলসা কইরতে আপত্তি হওনের কথা নাই । মাটির গুটির ভিতর উটপোকার বাচ্চা তো কানা কিন্তু তার কান সজাগ। পোলাপান এইটার এডভান্টেজ নেয় পুরা।  গুটির সামনে হরদম চলে গুল আর হাওয়া ভরার সেশন।  সেই গুলে কি নাই ভাইরে ভাই ! গুটির বাইরেটা যে সত্যি সুন্দর , জনগণ এই গুল শুইনলেই একমাত্র জানতি পারে।  ঢ্যামনা উটপোকা সেই পাম্প গেলে আর গুটি ভাঙার মনস্থ করে , হাঁ প্রি-ম্যাচিউর উড়ানের প্লান , ঠিক ঠাউর করসেন।  তিনদিনে যদি গুটি সে ভাঙলো তো রেশমি সুতো পড়লো কোমড় আর মাথায়  ! এইতো জীবন উটপোকার।  এই ছবিটা পুরানপল্লীর প্রথম  কানা  উটপোকার, শোনা যায় এইসব কানা উটপোকার দল ভারী হইতাসে দিনদিন । 'উড়ানফন্দি' একমাত্র কানাদের সুতো পড়ায় না , কানা সুতোয় যা এমনিও তা !







রবিবার, ১২ জুন, ২০১৬

সুরাইয়া , তোমার বেহেশতের খবর আমি জানিনা


পৃথিবীতে কিছুই  নেই এমন আর  
শান্তি দেবে বলে  খুঁজে ফেরা  যাবে  সন্ধ্যেগুলোয় 
তামাটে রঙের কোনো অচীন খামের ভেতর 
চিরুনীর  আঁচড়ে ছিঁড়ে যাওয়া চুল খুঁজে পাওয়া মুশকিল হবে 
সব জেনে পৌষের  ঝরে যাওয়া শিশিরের মতন গায়ে সয়ে 
তবুও নাহয় এইখানে রাজপথে এসে পাশে দাঁড়াও

সমস্ত ব্যর্থ প্রতিশ্রুতির মতন গভীর আক্রোশে 
আরেকবার উল্টোদিকের সবকিছু নাকচ করব 
শীতমৌরীর  ছটাকের মত উদবেল হয়ে গ্রীবাদেশ
সমস্ত শরীর জুড়ে ভানহীন একটা দিন চাই শুধু  ;
সুরাইয়া , তোমার বেহেশতের খবর আমি জানিনা সত্যি ,
এইবারে জুয়া খেলে বাজি ধরতে রাজী আলবাত্
যারা ওপথে গেছে ভাঙ্গা মেলা শেষে ,
তাদেরও খোঁজ নেব  ভরাবেলা মৃত্যুদিনের মতন বাঁচতে চাইব 
সুরাইয়া , আমি আরেকবার উল্টোদিকের সবকিছু নাকচ করব 

মন্দাক্রান্তা


মন্দাক্রান্তা , 
চকিত নদীর তীরে আদুর গাঁয়ে সন্ধ্যে হল , ছায়ামূর্তি মফস্বলের গল্পের মত মিলিয়ে মিলিয়ে যায় ,
চরে ফেরা গবাদির দল উঠোন পার হলে কারা যেন সুর করে নামতা পাঠের জোগার করে
ঘাসের ঘ্রাণের মত মৃদু সাঁঝ-ঝটিকার লতা ক্লান্ত গা ফিরিয়ে কবে থেকে শুয়ে পরে আছে 
ছলাত্ ছলাত্ ডিঙ্গি দূর পাড়ি দিলে শেষরাতভর ঝি-ঝি একা ডেকে যাবে 
শান্ত ;
নিস্তব্ধ ;
তারা জানেনা বিধ্বস্থ কোনো ফ্রন্টের মত
বিভীষিকাময় মৃত্যুভয়ে দিন গোনে আমার গ্রাম !
পৃথিবীতে প্রথম যুদ্ধ ঘোষণার দিন
কাউনের ক্ষেতে পোড়াশস্যের ছাই ;

অন্তিম নিঃশ্বাসে গাঢ় ওম রেখে
মৃত নবজাতকের নিঃসীম স্তব্ধতায় শুধু বহুজাতিক আউশ বাড়ন্ত যৌথখামার জুড়ে !
এশিয়ার সবুজ মাঠে খিরকিন লোরচা লাঙ্গল দিয়েছে আবার –
শোকের গানের মত বীজ ছড়ানোর শব্দ ছাপিয়ে
বাজারের কোলাহল 
শোনা যায় 
নিলামের হাঁক ;
কার্তিকের মাস এলে ধান ঝাড়াই-এর মরশুম ভর,
প্রাচুর্য্যের দেশে দেশে শিশু খুন হবে খুব অনাহারে ।
মন্দাক্রান্তা , চকিত নদীর তীরে আমজনতা খোয়াব দেখে
পার্থিব শ্লাঘাবোধে অরন্য কাঁদে তারপর – বনপাশে কারা যেন দাবানল দিল ভোররাতে !




তাদের সবার চুলের গন্ধের মত তাদের সবার তাকানোর ভঙ্গি এক , নিরবিচ্ছিন্ন এককভাবে তাদের সবার ভালবাসার গল্প রক্তাক্ত সঙ্গম ও সহজাত মিথ্যের গল্প


তাদের সবার চুলের গন্ধের মত তাদের সবার তাকানোর ভঙ্গি একরকম  , নিরবিচ্ছিন্ন এককভাবে তাদের সবার ভালবাসা 
ও সহজাত মিথ্যের গল্প।  
রোজকার হার্দিক বেশভূষা পরিত্যাগ করে আমরা পাশাপাশি বসি ।
মধ্যবর্তী দূরত্বকে সমঝে ওঠার আগেই শতাব্দীপ্রাচীন হিসেবনিকেশ রেখে দিই মাঝে ।
পৃথিবীতে সব প্রিয় বান্ধবীদের রঙ্গিন খামে পশমিনা পাঠানো হবে এইবার ,
পাঠানো হবে পশমিনা করে বাবলার কাঁটা ।
যারা ভোর হওয়ার অনেক আগেই নাভি তলপেট ডুবো জলে নাইতে নেমেছে , তারা মিথ্যে কথা বলবে ,
গাঢ় মিথ্যের প্রশ্রয়ে চুমু খাবে স্থলনের মরশুমভর ।
গ্রীবাদেশে কামড়ের লাল দাগ আর ফোলা ঠোঁটে অতঃপর সৌন্দর্য খুঁজবে জনৈক ;
মিথ্যের মত সুন্দর , মিথ্যের মত সহজাত ভঙ্গিমায় আমরা পাশাপাশি বসব আবার ।
গভীর রাতের মদ্যপ অটোয় এলোমেলো রাস্তা চলে , ক্রমাগত দ্রুতগামী গাড়ি চলে যায় বেপরোয়া ;
ক্রমশ আরও বিপরীতমুখী ।
একটা গাড়ি ঠকিয়ে আরেকটা টপকাই , জাহান্নমের শব্দময় লরিটাকে ভাঁওতা দিয়ে তার সামনে দিয়ে দুলে এগোতে থাকে অর্থহীন
অনুতাপহীন
ট্রাফিক জ্যামের মত 
সমস্ত পৃথিবী,
একজন আরেকজনের সাথে অদৃশ্য দৌড়ে নাম লেখাই,
সৌজন্যের ভান করি ।

মৃত নাজরীনকে আমি চিঠি লিখিনি,
মৃত আফরীন আমার চেনা নয়,
মৃত মরিয়মের মুখ আমি কখনো মনে করতে পারিনা ।

শনিবার, ১১ জুন, ২০১৬

ঈবলিশ মিঞা'র প্রলাপ


মাস্টার আমারে পাগল খুঁইজ্যা দিবা ?

মরণ দিনের মত আগলায় রাখুম 
ফাটাফাটা দহলা পার করি আসি যদি ভাত চায়
তারে ভাত দিমু - দহর কালা জলে মেঘ উঠি গেলে
সাজি মাটি দিয়া তার গতরে আঁকায়ে নিবো পাথর-যুগের মাশরুম

আন্ধারের মত মুখখান – পিঁয়াজের ওম ঠোটে ঠোটে ঘোরে
বিরিঞ্চি বটতলা কতক পুরান সাল , 
পুরান দিনের আশ
আমরা মিছা কথা কই
অগাস্ট মাসের পড়া ব্যালা তার হাতের তালুর ভাপ ওঠে কাউনের ক্ষেতের মায়ায়
অগাস্ট মাসের পড়া ব্যালা তার
চোখে
চোখে
ঘরছাড়া উচাটন

আমরা মিছা কথা কই ঈবলিশ মিয়াঁ
মিছা আদর করি , 
এক শরীর থাকি আরেক
খেই হারাই
অচিন গ্রীবাদেশ 
আরও গভীর উৎরাই অন্ধকার উপত্যকা
কারে খুঁজি
মিছা খুঁজি !