এত বৃহৎ আকাশে মিলিয়ে যাওয়া জলরাশি দেখে ভয় হয় নিজেকে হারিয়ে ফেলবো ভেবে। সেবার দুয়ার্সিনি যাত্রা রুবাইয়াত ও অনেকে। লঙ্কা নামের ড্রাইভার। রাতে এক ঘরে বসে সে তার শিশুর কথা শোনালো - পৃথিবীর আর সবার মত সেই হতভাগ্য দরিদ্র মাতাল চালকের গল্প শোনার রাত্তির শেষে ঘুমিয়ে পড়েছে লঙ্কা ; খাবারের ডাক পড়লে তাকে আর ডাকেনি কেউ ; আমরাও না ; গল্প শেষে যে যার মত ভুলে গেছি। রাতের খাবার শেষে সিড়ি বেয়ে দোতলার ঘরে উঠব বলে চাদর জড়ানো শীতরাত্তিরের লঙ্কার লাল চোখ দেখে আমার ভয় করেছিল বড় ; বিস্মৃত হওয়ার যন্ত্রণা সারা পৃথিবী জুড়ে !একটাও কথা না বলে মাথা নত করে সরে গিয়েছিল। এই আরবসাগর বড় মহান। কিচ্ছু মনে রাখার তাড়া নেই তার ; আফশোস নেই বিস্মৃত হওয়ার ! যুগের পর যুগ উপল খন্ডের ওপর নোনা বালু কোথায় হারিয়ে যায় কেউ মনে রাখেনা ! বিন্ধ্যপর্বতে প্রথম বেগনভলিয়া ফুটেছিল যেদিন দহিসার নদীর সুরমাই প্রথম ডিম দিয়েছিল ; যেবার দন্ডকারন্যে রাক্ষসের ঘুরে বেড়ানোর গল্প - বাল্মীকি রামায়ন লিখল - যখন শিবাজি আপেলের ঝুড়ি চড়ে জেলছুট হল; বিজাপুরে-গোলকুন্ডায় প্রথমবার সোনার খনি আবিষ্কারের ক্ষণে - প্রথম দুর্গের ভিত বসানোর দিন এই মহাসমুদ্র সব চাক্ষুষ করেছে। সন্ধে নেমে এলে মেরিন লাইনস ধরে নোংরা নোনা জলে পৃথিবীর নিষ্পাপ শিশুর দল বিশ্বায়িত বহুজাতিক পলিথিনের জঞ্জাল ওলটপালট করে ; তট বেয়ে সারি সারি গগনচুম্বী - এইসব দম্ভের শতাব্দী যারা রচিত করেছে প্রাচুর্যের পৃথিবীতে শিশুকে অভুক্ত রেখে , ইতিহাসে তাদের পরিনাম লেখা আছে। অন্ধকারে সীগালের দল হঠাত্ কঁকিয়ে ডেকে ওঠে। সুজন জানে সমুদ্র বিদ্রুপ করেছে !
বৃহস্পতিবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০১৫
মঙ্গলবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০১৫
কৈফিয়ৎ-নামা
৮:৪০:০০ PM / by কমলেশ / No comments /
জয়ন্তী পাহাড় হতে মৌসুমী মেঘ নেমে এলে আমার কষ্ট হবে বলে ঘর ছেড়ে এলুম। পলেস্তারাহীন নগ্ন দেয়াল ; একটা এঁটো চায়ের কাপ ; বহুজাতিক ভোগবাদের শহরে কিছু ঠিকানাবিহীন চিঠিজমা-টেবিলে আর কোনদিন কবিতার ডানা মেলবনা এলোমেলো। তাই ব্ল্যাকআউটের রাত্তিরে পথে নামলাম ; বৃষ্টির মরশুমে ঘরময় তোমার কথা মনে পরবে বলে। সারাগ্রাম ভরে মেঘ নেমে আসে ; কখনো মনে হত সেইক্ষণে তোমায় ডুয়ার্সের অর্কিড দেখাবো অথচ ঝড় আসার আগের মুহূর্তগুলোয় একলাই রয়ে গেলাম। এই দেখো আর একটুও কাব্য নেই আমার কথায় ; ঘুমভেঙে আর একটাও কবিতার ধারণা নিয়ে উতরোল হইনি ; কবিতা দিয়ে তোমায় আদর করতে চাইনি । স্নেহ নয় - প্রেম নয় - অভিমান নয় । হঠাত্ কোনো আলুথালু দিনে একটাও পরিচিত ঘ্রাণহীন শহরে আমার কষ্ট হবে বলে ঘর ছেড়ে এলুম। এইবারে কারো পিঠের ওপর যেখানে স্বযত্ন তিল আছে , আমি কান পেতে সেইখানে কোনো জীবন্ত নারীর হৃদকম্প শুনব , কোনো কবিত্বহীন দিনে। আমরা ভালবাসা'র চাইতে 'ভালবাসার ধারনাকে' খুব বেশি ভালবাসি বলে এইসব বুদ্ধিদীপ্ত সাহিত্যহীন সময়ে কাব্য দিয়ে নয় , তোমায় স্পর্শ করে বুঝে দেখব ; তোমায় স্নান করিয়ে দেব - ভাত মেখে দেবো - উত্তরের খোলা দিগন্তে বসে চুল বেঁধে দেব - তাই ঘর ছেড়ে এলুম।
রবিবার, ৪ জানুয়ারী, ২০১৫
বহুবচন
১০:৪৩:০০ PM / by কমলেশ / No comments /
কারা যেন রোজ এক একটা রং নিয়ে এসে গায়ে পরিয়ে দেয়। সেই কবেকার প্রস্থর যুগ - তাম্রযুগ ; যেদিন মানুষ আগুন জ্বালাতে শিখল ; যেদিন প্রথম ছবি আঁকলো - গান গাইল সেই প্রাচীন হতে প্রাচীনতম বিস্মৃতির আড়ালের সময় থেকে এক একটা আমি উঠে আসে আর রোজ ওতে কারা যেন এক একটা ডিসক্রিট রঙ লাগিয়ে দেয় ; এক একটা ভিন্ন সুগন্ধি কি দুর্গন্ধদ্বারা আলোড়িত করে ! নিজের মধ্যে ভাগ করে করে অনেকগুলো আমি তৈরী করে দেয়। তারপর সন্ধ্যে হলে আমায় হতভম্ব করে একত্রিত হতে বলে নিজের মাঝে ; রঙের আগের রংহীন আমি হতে বলে ; নিজের স্বকীয় ঘ্রাণ খুঁজে নিতে বলে ! সেবার শৈশব থেকে পালানোর পথে ভাবলাম মুখোশটা ফেলে এসেছি ; ওমা ! যেমনি খুঁজবো বলে পিছুপথ নিলাম তো দেখি গোটা পথে মুখোশের মেলা বসেছে ! কোনটা নিজের কোনটা নিজের নয় ভাবতে ভাবতেই বেলা নেমে এলো !
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)