রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৩

সুদিন কাছে এসো .

১.
রাস্তাজুড়ে  প্রহরীর মতন  সারি সারি হোর্ডিং  আর রং বেরঙের  আলোয় 
শারদীয় জনতা  ঘরে ফেরে 
ভোরে।
বনের পাখির ডাক  ফুটপাথ  এর গাছে - ট্রামের তারে -
পুরনো বারান্দার ভাঙ্গা রেলিং -এ  - 
আর ট্রাফিক সিগনাল এ -
যে  শিশু  আজও রাতে অভুক্ত ,
কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরেছে 
পথপাশে  -
কুঞ্চিত চর্ম কঙ্কালসার বৃদ্ধের কপালে যে ঘাম জমে ওঠে 
আর আস্তাকুঁড়ে - নর্দমায় - গুটি  মেরে বসা লোমহীন কুকুরের 
গন্ধের  সাথে মিশে যাওয়া নিশ্বাস তার 
ম্যাডক্স -এর আলো - দেশপ্রিয়র অম্লান রোশনাই ছাড়িয়ে যায় -
হাই তোলা - ঘুমচোখে বেলুনওয়ালা  -
ভেপু তার বিক্কিরি  হয়নি  সব  তাই  জনতার ভিড়ে ভেপুর ব্যাপারী 
নতুন কিছু খোঁজে ।

২.
তারপর ,
প্রত্যেকটা অভুক্ত জঠর 
প্রত্যেকটা ক্লান্ত শরীর 
প্রত্যেকটা উত্সবহীন  নশ্বর দেহ 
"মহানগর , আমি পরাজিত "  - বলতে চেয়েও 
"তোমার শহর , আমার শহর " - এর কোলাহল ছাড়িয়ে 
আরেকটা বৃহৎ উত্সবের স্বপ্ন দ্যাখে ;
আর সেই গান মুখরিত হয় 
প্রত্যেকটা একক ফুটপাথে -
অন্ধকার গলির বিড়ির ধোঁয়া আর কাশিতে -
একবিংশের প্রত্যেক উদ্বাস্তু-অভুক্ত জনতার হৃদয়ে ,
"সুদিন কাছে এসো   ...." !

শনিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৩

আরেকটি ভাঙ্গনের গল্প ...


১.
চর নন্দনপুর - মান্দালঘাট  - বোয়ালমারী জুড়ে
সেবার  দেশভাগের ঢেউ  !
তিস্তার  ধার  বেয়ে  লোকে আবার ঘর  বানিয়েছে 
বানিয়েছে চাষের  ক্ষেত 

ফেলে আসা  দেশের  স্মৃতি নিয়ে -
আর  হোগলার  বন  কেটে  কেটে - 
আরেকটা সিঁদুরে  আমের বাগান -
আরেকটা ঘাট বাধানো পুকুর  - তালসারী - বাঁশবন 
গৃহস্থের নতুন স্বপ্নের  ঘোরে 
আরেকটা রাজশাহী -
আরেকটা খুলনা -
আরেকটা ডোমার -
আরেকটা মৈমনসিন্ঘা  পাওয়ার অবচেতনতা তবুও মিলিয়ে গ্যাছে উত্তর তিস্তা আকাশের  ধ্রুবতারায় !!


২.
পূব ঘরের পাশে গোলা ঘর ছিলো  - ভর্তি  ধান  - চৈত্রের  রসুন  -
আর  একেক  আট -দশ কিলো  কুমড়ো  এ  ভরা  বছরভর ;
দক্ষিনের আদার বন  আর হলুদের ফুল কবেকার এক শান্ত দুপুর  -
                             পাঁক -শালে  ধোঁয়া  -
                             পাশের কাটাল  গাছ  -
                             একটা বেড়ালের ডাক  -
                             উঠোনে শুকোতে দেয়া ধানে পায়রার  ঝাঁকের মতই 
                             পালিয়ে যাওয়ার গল্প  এগুলো !
গোয়ালের গরুর পাল আর দুটো মোষ  নিয়ে যে ছেলেটা শীষ  দিতে দিতে চরাতে যায়  মাঠ তিস্তার কাশবন  -
আকাশ নেমে আসা মেখলিগঞ্জের দিকে -
শুনেছি  সে কেরলায়  আছে , ইটভাটা  খাটে ;
যেবার প্রথম পাম্প -সেট  এলো কিংবা পাওয়ার -টিলার  - বাড়িতে  -  সে সব কটা  দিন স্পষ্ট ,
ওই বাঁশবনের  ভেতরে যে রাস্তা চলে গ্যাছে বক্সীগঞ্জ , ফাল্ল্গূন-এর উদাম দক্ষিনার  মধ্যান্যে
যে ভাঙ্গা-লোহা কৌটোর ব্যাপারী-টা  আসে , সে কিনেছে সেই সব লোহালক্কর কেজি দর-এ !
আর কলার বাগান - সুপুরি বাগান - পুকুর - তেজপাতা গাছ -
নলপুকুরের  মাঠ - সবকটা আম - ঠাকুরদা যে লিচু কলম বুনেছিল সেইগুলো -
গরুর পাল - এমনকি থালা-বাসন -রান্নাঘর  -
যে পীড়ি-তে  বসে বাড়ির 'কামাল ' থেকে  প্রত্যেকে  খেতো  -
সেই সবকিছু ভাগ-বাটোআরা হয়ে গ্যালো ! 
মোষের দায় কেউ নেবেনা তাই বেচে  দিয়েছিল মোহিত্নগরের হাটে -
টটে  বুড়ো  জানে তার হাতে বড় হওয়া মোষ  কেঁদেছিল বড়।
আর সে রাতে নন্দনপুর  - মান্দালঘাট-এ পাট-ক্ষেতের  আল  জুড়ে -
প্রত্যেক দুর্বা ঘাসে ঘাসে সেই ক্রন্দন শিশির হয়ে ঝরেছিল এই বিচ্ছেদের-শতাব্দীর জন্মলগ্নে । 

৩.
দেশ ভাঙ্গে -
ভাঙ্গে নদী -
তারপর  এই  প্রেমহীন  শতক 
পৃথিবীর  সবকটা  একান্নবর্তী -পরিবার ভেঙ্গে উদ্দামতায় নাচে  !
জয়ী , তোমার মনে ক্রন্দন নেই  - নেই এপ্রিলের কাঞ্চন ঝরে  গ্যালে বেদনা ;
মিছে ভাবি ,
"সকলের তরে সকলে আমরা ......" -
দূর  !!! শিশুপাঠ  কেউ পরেনাকো আজ ।