মঙ্গলবার, ১৮ জুলাই, ২০১৭

আঠারো ভাটির দেশ



আঠারো ভাটির দেশে জলজ গল্পের ভাপ ওঠে । জোয়ার শেষে কাদামাটির ভেতর থেকে লালকাঁকড়ার দল মানুষের প্রাচীন স্মৃতির মতন উঁকি দেয় । লাজুক
, চিরকালীন ধীর কোন আলুলায়িত নদীর দেশে বৃষ্টিমাসের সংবাদ শোনায় । এইখানে মানুষের গল্প কেবল এক ঘর ভেঙ্গে নতুন ঘর গড়ে তোলার ; শেষ নোনা-বন্যার পর অপত্য স্নেহে আবার নতুন ধানক্ষেত গড়ে তোলার ।

মাছের নাম পায়রা
, নদীর নাম মাতলা , কুকুরের নাম রাঙ্গা , দক্ষিণ দিকের সমস্ত বৃহত্তর ঘাট এদের কাছে মৎস্যবন্দর ; দ্বীপের নাম সুধন্যখালী । জঙ্গল এখানে কেবল মানুষের বিস্মৃতির আড়ালের অবচেতন ইতিহাস নয় বরং প্রাচীন মহীরুহের সেই প্রথম অঙ্কুরোদ্গমের মতন বিস্ময়ের , নেশার মতন গাঢ় , নিরবিচ্ছিন্ন । যোগেন্দ্রবাজারের সেই গ্রাম্য কবরেজ বলেছে তার বয়স উদ্ভিদের জন্মলগ্নের সমান । তার কলিজার ভেতরে সোদরবনের গাছের জান, নোনাজলার লতাপাতার স্পন্দন । জেমসপুরের অখিল মল্লা শীতের মরশুমে যখন উত্তরদিকের প্রদেশগুলোয় ধান কাটতে যায় তখন তার মনে হয় তার বয়স বাড়েনি , তার বয়স সেই এক রয়ে গেছে পুরাতন এক মিষ্টিবন্যার পর আরেক নোনা-বন্যা অবধি , মাঝখানে বাকি পৃথিবী, লোকজন বদলে গেছে শুধু। মৎস্যদেশের সরু নৌকাগুলো মৌসুমি মরশুম শুরুর আগে যেমন করে নীলরঙা জাল উড়িয়ে উড়িয়ে বিদ্যাধরীর মাঝে বাগদার চারা খোঁজে , তেমনি সমস্ত লাহিড়িপুর , সরদারপাড়া , সাতজালিয়ার প্রত্যেক ভিনদেশি মানুষ তাদের ফেলে আসা নদীর দেশ , সেই সোনাঝুরি-লালমাটির ঘ্রাণ ভুলে গতশতক নোনা কাদামাটির ভিতর আর বনদেশের মৃতপাতার ভিতর মানুষের চিরকালীন গল্প খুঁজছে ।

পান-সুপুরির সুবাসের মতন স্নিগ্ধ তার কালোমুখ । ঘোলাজলের ধারে মালতি ফুলের ঘর
; অ্যানপুরের সেই কিশোরী জলার দেশে লালন সাঁইয়ের প্রেমিকা ছিল ; সেই কিশোরী রাঢ়দেশের প্রথম খ্যাপা বাউলের গৃহত্যাগের রাত্তিরে প্রিয় সখা ছিল । সেই কিশোরী মইষাল বন্ধুর যৌবনের হারিয়ে যাওয়া ভালবাসা ছিল ; সেই কিশোরী রাষ্ট্রঘোষিত আসামী স্টিফান হোরোর চিরকি মুরমু , এইখানে হ্যামিল্টন আবাদে তাকে নির্বাসন দেয়া হয়েছে এক শতাব্দী আগে । সুধন্যখালী দ্বীপের বাঁদায় সে সারাদিন কাদার জলা পার করে মীন ধরে আর জলজ স্মৃতি খোঁজে ; বৃষ্টি আসার অনেক আগের হাওয়া থেমে যাওয়া গুমট পৃথিবীতে সুর করে ঝুমুর ধরে । খোলাখালির নয়া চরের ধারে প্রস্তর যুগের মতন স্নেহে সংসার পাতে , বাঁচে । ওপারে ছায়ানৌকাগুলো আনাগোনা করে ধীর ; সমস্ত হ্যামিল্টন আবাদ জানে নক্ষত্রের ধুলার ভিতর মানুষের জান , কিছুর শুরু নাই , শেষ নাই ; দুনিয়ার সব গল্প মনে রেখে দেবে আঠারো ভাটির ঢেউ ।

শনিবার, ১ জুলাই, ২০১৭

কথন


আমি মানুষের বয়স্ক গাছ হওয়ার কথা বলব
প্রাচীন বীজের অতীন্দ্রিয় জন্মলগ্নের কথা বলব ;
আদিম
শ্রবণা নক্ষত্রের মত কাতর ও সকরুণ
ভাঙ্গা হাট শেষে বসে থাকা
প্রস্তর যুগের এক ব্যাপারীর কথা বলব ।

আমি মানুষের শুঁয়োপোকা হওয়ার গল্প বলব 
এক মৌসুমিদেশে গৃহযুদ্ধকালীন নষ্ট গুটিবাগিচার কথন শোনাবো
মৃতদেহের গন্ধের মত তীব্র রৌদ্রদিনে নিঃস্ব গ্রামদেশ
শোকাতুর ধানক্ষেত জুড়ে পুরুষ কাকতাড়ুয়ার কথা বলব ;

বিনয়ী
বিশ্বাসঘাতকের মত রিক্ত 
শস্যদানার স্মৃতিধংসের কথা
আমাদের জলজ আখ্যান 
যুদ্ধদেশের সহজাতবোধ
গানহীন বিগত বৃষ্টিশতক 
এইসবকিছু আমি বলব

অতঃপর
আমি মানুষের ব্যাপারী হয়ে ওঠার গল্প বলব
আমি একটি আত্মহত্যাপ্রবণ বনভূমির কথা বলব 
একটি আত্মহত্যাপ্রবণ প্রজাতির কথা বলব ।


বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৭

গাঙের দেশের গল্প



পাটপচা পুকুরের শ্রাবনী গ্রামগুলো ফাঁকা হয়ে নেই ; মৃতের মতো অসাড় হয়ে নেই ; জড় - অফলা নেই । যারা জানে বীজের ভেতর গল্প বোনা থাকে আর প্রত্যেক মহীরুহ আশমানের গভীরতার কথা আওড়ায় , সেইসব মানুষের খোলস থেকে একরকম লড়াকু মানুষেরা প্রত্যেক শতকে নেমে এসেছে ।
কোন দেশের খোঁজে যাচ্ছে তারা ! কোন দেশের খোঁজে ?
কেমন ঘর খোঁজে সারা মহাল; অচিন দেশের পরিযায়ী তো নয়, সে আমাদের ছাতিকূল ।
তোমার মা কে ? তোমার বাপ কে ? জানোনা ?
তুরুক তার নাম ছিলোনা কখনো। অঘ্রাণ মাসের দহ আমার , হাওড়ের পর হাওড় কিসের তাড়নায় পার হওয়া ?  ওইখানে সবকটা ভিনদেশি পাখি ছাতিকুলের মেহমান ! ওম ওঠা ঝাড়ের ভেতর সদ্য গজানো লোমশ পাখির বাচ্চা ছাতিকুলের নাড়ির শব্দ শুনতে পাবে দূর থেকে।  সেই জলার  ধারে ছাতিকূলকে ওরা পিটিয়ে মারার সাহস করেনি ।

ফরিদুল হাসান , বড় আড়তের মুটে , লঙ্কাবোঝাই বস্তা সেলাই করতে করতে চোখে জল আনবে কেন ? ভয়ে ভয়ে তাকাবে কেন সে  ? মাইনর স্কুলের স্লেটে আমাদের লেখার অক্ষরগুলো মোসলমানি জাহির করতে এসেছে কি ? তোমরাই জানবে ! ফরিদুল হাসান শীষ দিতে দিতে দূরের মাঠে হারিয়ে যায়। সেই গদাধর মাস্টারের নামতার ক্লাসের মতন ঘেমো সরল মুখ তার, চুলের ভেতর থেকে কেমন আতরের খুশবু আসে । ফরিদুল পালিয়ে পালিয়ে বেরিয়েছে কি ? এক গ্রাম থেকে আরেক , এক শহর থেকে অন্য কোথাও ? ফরিদুল হাসান আমাদের ফিরিঙ্গিডাঙার রাজা , ভাউলাগঞ্জের  মেলায় আমার পাতানো সখা , উটের পিঠে চড়ে ঘুঘুমারীর দহলা পার হওয়ার কথা তার এই মরশুমে আবার  ।

নাসিমুল চাচা ফজলি আম নিয়ে আসবে আর অশ্বিনের মতো , আমের মরশুম আসার অনেক আগেই তার ঘরে ওরা আগুন দেওয়ার সাহস করলে কলিজা কেটে নেবে সারা মহল্লা একজোট হয়ে , কুমবাড়ির সব মোসলমান  ঘরে এই শীতে সব হালুয়ার স্বাদ নোনতা হবেনা , খুব মিঠা হবে ; সব ভাপা পিঠের ভেতর সাবিনা চাচীদের শেষ চোখের জলে টইটুম্বুর করার খোয়াব যাদের , তাদের গর্দান যাবেই যাবে ।
হাভাতের দেশে মুসলমান মেরে কবে কোন হিঁদুচাষার পেট ভরেছে ? ছিয়াত্তর দেখোনি ? ছেচল্লিশ ? সাতচল্লিশ আর একাত্তর ভাত দিয়েছে কিষান মজুরের ??
ঈদের দিন আসমা পারভীন আবার তার মেহেন্দি হাতে মোরব্বা এনে দেবে ,  তিন বাংলা সাগরের সমান তার সুরমা চোখের গভীরতায় তাকিয়ে সারা মহল্লা হারানো নথ খুঁজবে । দক্ষিণ দিকের সুপুরি বাগানে গোলমরিচের ঝোপে কে বসে যেন।  ঠোঁটে রসুনের বাস  - কার্তিকের শীত - পুরান চিঠির খাম হারাবে না আর ; আসমা পারভীনের লেখা চিঠি , তার  দেয়া মেঠো ইঁদুর কেউ জবাই করতে এলে আগুনে খাঁক হবে বঙ্গদেশে  ধর্মের দালালের সব কটা ঘর ।

খামির চাচার নামের দীঘিটার অন্য নাম হয়নি এখানে।  সাতচল্লিশ অনেক আগের বাজে খোয়াব , খামির চাচা রংপুর গেলো , তার দীঘির নাম খামিরের দীঘি রয়ে গেলো।  ওদিকে ময়দানের ধারে দরবেশ মানিক পীরের থানে সাঁঝ নেমে এলে কে আলো দিয়ে যায় ! দরবেশের থানের জল সারা মহল্লার মান।  দরবেশের আলো নেভায় কোন দালালের বুকের পাটা !

আমাদের ইতিহাস ধর্মের বিভেদের নয় , শোষক আর শাসকের বিরুদ্ধে হতদরিদ্রের হকের লড়াইয়ের ইতিহাস  ; আমাদের ইতিহাস ধর্মের মোড়কে ভুল ব্যাখ্যার ইতিহাস নয় , আমাদের ইতিহাস চিরকাল শোষকের আর শাসকের বিশ্বাসঘাতকতার বিরুদ্ধে এক হওয়ার ইতিহাস ।  আমাদের ইতিহাস ফকির সন্ন্যাসীর ঐক্যবদ্ধ  লড়াইয়ের ; আমাদের ইতিহাস  নীলকরদের উল্টোদিকে লড়াইয়ের ।  আমাদের ইতিহাস ফকির মজনু শাহর বলিদানের।  আমাদের ইতিহাস সিরাজগঞ্জ - পাবনার কিষানের একজোট হয়ে লড়ার ; জোতদার আর মহাজন উৎখাতের লড়াই ; কুমিল্লায় , বরিশালে , ময়মনসিংহে দলিত আর মুসলিম গতর খাটা হতদরিদ্র মানুষের একসাথে লড়াইয়ের । আমাদের ইতিহাস সব পশ্চিমা মহাজন আর ব্যাপারীদের ধান্দাবাজির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ইতিহাস , আমাদের ইতিহাস আব্দুল  সামাদ মিঞার কবিতার গর্জন !  হাজংয়ের বিদ্রোহ।  আমাদের ইতিহাস ছিয়াত্তরের বিভীষিকাময় দিনে ফকির-সন্ন্যাসীর একত্রিত  লড়াইয়ের।  রংপুরে , দিনাজপুরে , উত্তর দিকের পাহাড় অবধি চলে যাওয়া বাংলার কিষানের লড়াই , আমাদের ইতিহাস , তেভাগার ইতিহাস। সাঁওতাল , রাজবংশী আর গারোর এক লড়াইয়ের ইতিহাস।  আমাদের ইতিহাস বাংলার দলিতের কাছে উচ্চবর্ণের মিথ্যে স্বাধীনতার প্রস্তাবের বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস।  শহীদ তিতুমীরের ইতিহাস আমাদের ইতিহাস ; নকশালবাড়ির লড়াইয়ের ইতিহাস বাংলার কিষানের ইতিহাস ।  আমাদের ইতিহাস শ্রীনিবাস , মাদার বক্স ,অরূপ নারায়ন আর মুসা শাহের  জোটবদ্ধ লড়াইয়ের  !
আমাদের ইতিহাস ধর্মের মোড়কে ভুল ব্যাখ্যার ইতিহাস নয় !
আমাদের ইতিহাস শোষক আর শাসকের বিরুদ্ধে হতদরিদ্রের হকের লড়াইয়ের ইতিহাস !


শুক্রবার, ১৭ মার্চ, ২০১৭

‘কুদ্দুস সাহেব , বুকের কলিজা কেটে দিলে এইবারে বিপ্লব হবে তো?’ : ছাতা আবিস্কার ও একটি গুপ্তহত্যার গল্প

                                                          © Bernhard Lang 

১.
বিগত শতকের রেলগুমটি থেকে উঠে এসে মরিয়ম প্রশ্ন করে তোমাদের এই ভাগাভাগির রাজত্ব কবে শেষ হবে ?
‘গ্রাম উঠে এসেছে শহরে’
লোহালক্কড় , চাল-গমের মালগাড়ি আর ট্রেনভর্তি নয়া উদবাস্তুর দল এসে শহরে ছোটে
লুটোপুটি খায় বিজ্ঞাপনের দেয়ালে দেয়ালে
শহরতলি-গামী শেষ ট্রেনগুলোয় ঝিমোয় আর ঝিমোয়
এদের ঘরে ফেরার আনন্দ নেই –
পুরাতন কোন মুক্তিদিনের স্মৃতি নেই -
মৃত্যু কারখানা থেকে এক একটা ঘরমুখো জীবন্ত লাশ ফের মরে গিয়ে আগামী আবার ছুটবে – ছুটবে আর ছুটবে
শতাব্দীর পর শতাব্দী রোমের রাজপথে
ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান
পম্পেই নগরীতে , হরপ্পা , ইনকার প্রত্যেক প্রোথিত পাথরে
তেলের দেশে দেশে , আজারবাইজানে কোন নিষিদ্ধ নগরীর দালানে দালানে
রাজারহাট , টেকনোপলিস – সবকটা হাইওয়ে – ফ্লাইওভার – এদের রক্তের রঙ জমে গাঢ় থেকে গাঢ়তর হলে
রোজ মরে গিয়ে রোজ বেঁচে উঠবে হাওড়া আর শিয়ালদহের প্রথম লোকাল ধরতে
তারা জানে তাদের মাথা নত হয়ে আসে
তারা জানে গতশতকের শোক রেলগাড়ির চাকায় চাকায় প্রমাদ গোনে দীর্ঘ – নিরবিচ্ছিন্ন ।

২.
উত্তরে যাও , বুঁজে যাওয়া ক্যানালের ধার - চাঁদ সদাগর – ধাপার মাঠ এলে
পঞ্চান্নগাঁয়ের ঝিল থেকে উঠে এসে মরিয়ম জানতে চাইবে এখানে যাদের বাড়ি, এখানে তাদের বাড়ি কিনা !
বাইপাস ধারে বাবুরা স্বপ্ন বুনেছে উড়ালপুল আর খাম্বা
গ্রাম তোলপাড় করে বাড়তে থাকা একতলার ওপরে অনেক তলা
একরকম দেখতে সড়কগুলোয় একরকম মনের
মানুষের একরকম দালানে দালানে
দশলাখ ইটভাটার চোখের পানি আছে
বিশলাখ রাজমিস্ত্রির গুপ্তখুনের সারমর্ম লেখা আছে
ঝকঝকে তকতকে কাঁচের দেয়ালে দেয়ালে
বিশলাখ শ্রমিকের সাথে বেঈমানির প্রলেপ দেয়া আয়নায়
আমরা নিজের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাইনা এখন !

৩.
তারপর , একদিন আবারো রাষ্ট্র এসে বললে
দু’টাকায় চাল নাও , দক্ষিণে তো দরিয়া , দরিয়াই মুক্তি
প্রথম শিবির বনবাসে বহুদিন , তাই দ্বিতীয় শিবির এসে নৌকো বানিয়ে দিলে ; জনতা যখন বুঝল নৌকো ফুটো কাঠের
ঠিক সেই সময়ে তৃতীয় শিবির এসে জানালে ,
‘রঙ চাইনা , ঝান্ডাও সেকেলে , দরিয়া যখন নাই
নৌকোর কি বা প্রয়োজন ! মাথামোটা মতিভ্রমে নৌকার স্বপ্নে দেখে !’
তৃতীয় শিবির হুংকার দিয়ে বলে উঠল, ‘তোমাদের শুধু শেকল আছে ! আর কিচ্ছু নাই ! শুধুই শেকল , একটা গোটা ! শেকল ছিঁড়লেই চিরমুক্তি। বেশি ভেবে কাজ কি ?!’

এই বলে তৃতীয় শিবিরের প্রত্যেকে ছাতা নিয়ে এল । কিছু হোক নাহোক , ছাতা বাড়লেই শেকলে টান বাড়বে বইকি !
দরিয়া তো নাই,  দুনিয়ায় ক্ষুধা নাই , ধান্দাবাজি নাই , দালাল নাই – এক আছে শেকল আর আমাদের সেন্ট্রাল কমিটি !
আইস , ছাতার দোকানে দিনবদলের দড়কষি !

৪.
ইতিমধ্যে হাহারকর এবং হোলহালকর-পন্থীরা এসে হম্বিতম্বি শুরু করল , তাদেরও চারদফা আছে বলে !
গঞ্জিকাহীন সাধু বিলিতি রামের বোতল পকেটে গুঁজে বললে , মোসলমান একবেলায় দশথালা ভাত খায়
প্রথম শিবিরের এক দীর্ঘ টিকা নধর টিকির বামুন এসে বললে,
‘গো-মুতের অভাব হলে দরিয়া শুকিয়ে যাবে ; মাতৃ দুগ্ধপান ও গো-দুগ্ধপান , উভয় সমান
অতএব, বাছুরে পেল কি পেলনা ভেবে কি লাভ , গো এবং মাতা উভয়ই মাতা !’
হোহোন হাগবত-পন্থীরা হাফপ্যান্ট খুলে ততক্ষণে জনৈক দলিতের মাথায় হেগে নিয়ে সায় দিয়ে জানালে , ‘বটে, বটে ! মোসলমানের গো-ভক্ষণ বন্ধ না করিলে , মুক্তি কই , মুক্তি কই ?!’
হাহারকর এবং হোলহারকর-পন্থীরা সকলে একযোগে অনুযোগ করল, ‘তোমার রাগ, তোমার ক্ষুধা , তোমার সবের দোষ মোসলমানের , দেখনা মোসলমান কোতল হলে সারা দেশ কেমন চুপ করে থাকে , অদ্ভুত নীরবতায় দেশ দেশ (দ্বেষ, দ্বেষ !!) বলে চীৎকার করে !’

৫.
তৃতীয় শিবির ততদিনে জাঁকিয়ে বসেছে ছাতার বাজারে ; তাদের মাঝবরাবর কাঠের তক্তার দেয়াল , কংক্রিটের দেয়াল হয়েছে এখন ; প্রথম এবং দ্বিতীয় শিবির কোন নড়াচড়া না করলে, এরা ছাতাতেই খুশি থাকে আজকাল ঢের বেশি !
অতঃপর মরিয়ম গত শতকের শেষ প্রশ্নটা ছুঁড়ে দেয় ,
‘কুদ্দুস সাহেব , বুকের কলিজা কেটে দিলে এইবারে বিপ্লব হবে তো?’