মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৪

ডিসক্রিট




একজন অফিসফেরত আরেকজন টিউশন পড়ায়। দুজনের প্রথমবার দেখা হওয়াটা একটুও কাব্যিক ছিলনা। কেউ কারো চোখ ভালবাসেনা এখনো হয়তো। অফিস শেষে ঘরে ফিরে রান্না বসায়। মাঝে মাঝে টিউশনের চাপ কম হলে অথবা কোনো ঝড়বাদলের দিনে অথবা শনিবার রবিবারগুলোয় একসাথে রাধে তারা। বেশ ক'বছর হলো অথচ একদিনও কাউকে আদর করে ডাকবার সাহস হয়নি কারো।  মাঝরাতে কখনও শরীরের  আঁতাতে নিঃশব্দ চুমু আর কানের পাশে উষ্ণ নিঃশ্বাসগুলো কেমন যেন ইশারায় সব বলে দেয়। সেইসব কলেজের দিনে তাদের প্রথমবার দেখা হওয়ার অনেক পরে তারা দুজনে প্রথমবার একলা কোথাও বেরিয়েছে। তার কত আগে কনট্রাসেপ্টিক - অদ্ভুত মুখ করা ফার্মাসীর দোকানদার - কন্ডোমের প্যাকেট কিনে যার যার প্রেমিক প্রেমিকার দেহমিলন অথবা একরাত্তিরের অনুগল্প কিংবা উপন্যাসের ক্ল্যাইম্যাক্স -  সেসব বহুবার যার যার মানুষের কাছে মদ খেয়ে ছড়ানো - জয়েন্ট রোল - বিছানার চাদর রোল - তারপর হঠাত গোটা সম্পর্কের উঠোন জুড়ে চীত্কার করে কেউ বলে উঠলো "প্যাক আপ !!"
শেষ বর্ষা এল ; এক একটা শুস্ক বালিয়াড়ি  পেরোলে আমরা সবাই ভিজতে ভালবাসি ; যাবতীয় বালি - বগলতলা জুড়ে জমা ময়লাগুলো ধুয়ে ফেলতে ভালবাসি তাই সবাই খুব ভিজলো।  কতক জল টিনের চাল থেকে পড়ে - কতক গাছের পাতা থেকে - কিছুটা ল্যাম্পপোষ্টের গা-বেয়ে - কতক শূন্য হতে নেমে যেমন একটা স্রোত তৈরী করে - সেরম আরেকটা স্রোত - সেরকম আরও কত - সেই প্রত্যেকটা ডিসক্রিট স্রোতেরা মিশেছে  বড় নালায়। আর নয় আর নয় করেও দুটো ট্রলি একটা সুটকেস মিলিয়ে ঘর হল দুজনের - নাগেরবাজার বড় রাস্তার ওপর ব্যালকনি। অন্তর্বাস পরে দিব্যি ধুমপান করা যায় এ -ঝুলবারান্দায় রাত হলে। শোকার্ত কোনো জোছনার পর যেমন আমাদের কোনো জৌলুসহীন বস্তুকে কেবল পুরনো শুধু একারনেই ভালোলাগে -তেমনও কোনো রাতে কেউ ভাবতে বসে - সম্পর্কজুড়ে কাব্যিকতা ছিল কি ! আসলে কাব্যিকতার সংজ্ঞা বড় বায়াসড কিংবা শ্রেণীসচেতন আর নাহলে বড় জৌলুসময় ! ভেবে বললে বরং  ভয় ছিল বলা যায় ; দুটো ক্ষুধার্ত কুকুর পরে থাকা একটা পাউরুটির টুকরো দেখে যেরম একে অন্যকে  ভয় পায় সেরকম ভয় ছিল  - ভয় ছিল বিছানা বদল নিয়ে - সত্যিকারের পুরোনো জিনিসে প্রাচীনত্বের মায়া হারানোর ভয়। তবুও যে  বিশ্বাসে লোকে খাবার ঢেকে রেখে কাজে বেরোয় - ন্যাংটো হয়ে জামাবদল করে আরেকজনের সামনে - সে বিশ্বাসেই  ঘর হয়ত । মার্চের সন্ধেয় ছাদে মিষ্টি হওয়া দেয় উত্তর কলকাতায়। তারা চা খায় চেয়ার দুলিয়ে ; পাড়ায় পাড়ায় আরেকটা গজানো অসন্তোষ - দেশ জুড়ে বড় হওয়া - দ্বেষ জুড়ে বড় হওয়া মিথ্যে কথারা গলির মোড় পেরিয়ে তাদের দরজার পাশে অপাংতেয় লেটারবক্স অবধি পৌছনো এযুগের সিন্থেটিক না-পাওয়ার বেদনারা হাঁসফাঁস করে। রোজকার চায়ের দোকানে কাস্টমার দুইখান তৃপ্তিসুচক শব্দ করে চুমুক দিয়ে - গল্প করে - চা-ফুরোলে টাকা দিয়ে পালায় - চায়ের দোকানদার - এঁটো চায়ের কাপ - স্তূপাকৃত চা-পাতার ডাঁই ভুলে যায় সেরম আনুষ্ঠানিকতার গল্প হয় দম্পতির। অতঃপর আবার ভয় পাওয়া - ছুটতে চলা।  কারো পেছনে ছুটছে নাকি কারো তাড়ায় কিচ্ছুটি বোঝার জো-নেই। রাত্রির নাটক শেষ হলে আচমকা স্বপ্নের মত বান আসে। তাদের সংসার জুড়ে যদি কখনো তৃতীয়জনের আকাঙ্খা থেকে থাকে - অবচেতনতার ওপার থেকে সেই তৃতীয় স্বর শোনা যায় - ক্রন্দনরত - যে শিশু খেলতে ভুলে গেছে খেলনার ভিড়ে - জৌলুস আর রঙিন পৃথিবীতে - তার ক্রন্দন। এক একটা দশক এক একটা শতক জুড়ে মিথ্যে কথারা - এক পা এগোতে গিয়ে দু'পা পেছনোর খেলা এখনো সাঙ্গ হয়নি যে  প্রিয়তম  !

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন